চরিত্র গঠনে ইসলামের ভূমিকা কতটুকু?
চরিত্র গঠনে ইসলামের ভূমিকা
মানুষের জীবনে চরিত্রই হলো তার প্রকৃত পরিচয়। একটি সুন্দর চরিত্র সমাজে সম্মান এনে দেয়, আর খারাপ চরিত্র মানুষের জীবনের সব অর্জন ধ্বংস করে দিতে পারে। ইসলাম এমন একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে আত্মার পরিশুদ্ধি পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে দিকনির্দেশনা দেয়। তাই ইসলামের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো মানুষের চরিত্র গঠন।
১. কুরআনের নির্দেশনা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বহু স্থানে চরিত্র গঠনের কথা বলেছেন। যেমন:
“তোমরা সত্যবাদী হও, কারণ সত্যতা ন্যায়পরায়ণতার দিকে導 করে, আর ন্যায়পরায়ণতা জান্নাতের দিকে導 করে।” (সহীহ বুখারী)
এই হাদীস এবং কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে স্পষ্টভাবে নির্দেশ আছে, একজন মুসলমানকে অবশ্যই সততা, ধৈর্য, নম্রতা ও ক্ষমাশীলতার গুণ অর্জন করতে হবে।
২. রাসূল (সা.)-এর আদর্শ আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন “আল-আমিন”—অর্থাৎ সবচেয়ে বিশ্বস্ত। তিনি কখনো কারো সাথে প্রতারণা করেননি, মিথ্যা বলেননি, অসৌজন্যমূলক আচরণ করেননি। তার জীবন চরিত্র হলো আমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যার চরিত্র উত্তম।” (তিরমিযী)
৩. সত্যবাদিতা ও আমানতদারি ইসলামে মিথ্যা বলা মহাপাপ। একজন প্রকৃত মুসলমান কখনো মিথ্যা বলবে না, প্রতারণা করবে না। আমানত রাখা হলে তা যথাসময়ে ফেরত দেওয়া, কারো বিশ্বাসভঙ্গ না করা—এগুলো ইসলামের মৌলিক নৈতিক শিক্ষা।
৪. নম্রতা ও বিনয় ইসলাম আমাদের শিখায় অহংকার না করতে। কুরআনে বলা হয়েছে: “তুমি পৃথিবীতে অহংকার সহকারে চলো না।” (সূরা লুকমান: ১৮)
একজন ভালো চরিত্রের মানুষ বিনয়ী হয়, ছোটদের স্নেহ করে, বড়দের সম্মান করে। রাসূল (সা.) সবসময় বিনয়ী ছিলেন এবং দুঃখী, গরীব ও এতিমদের পাশে দাঁড়াতেন।
৫. রাগ নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমাশীলতা ইসলামে রাগকে একটি ধ্বংসাত্মক আবেগ হিসেবে দেখা হয়। হাদীসে এসেছে: “সত্যিকারের শক্তিশালী সে নয়, যে কুস্তিতে জয়লাভ করে; বরং সে, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।” (সহীহ বুখারী)
একজন ভালো চরিত্রের মানুষ ছোটখাটো বিষয় মাফ করে দেয় এবং প্রতিশোধপরায়ণ হয় না।
৬. দয়া ও সহানুভূতি ইসলাম শুধু মানুষ নয়, পশু-পাখি, গাছপালা—সবকিছুর প্রতিও দয়া প্রদর্শনের শিক্ষা দেয়। রাসূল (সা.) একজন মহা-দয়ালু মানুষ ছিলেন। তিনি বলেন: “তোমরা পৃথিবীর মানুষের প্রতি দয়া করো, আকাশের মালিক তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।”
৭. ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফ চরিত্রবান মানুষ কখনো পক্ষপাতিত্ব করে না। ইসলাম বিচার ও ইনসাফের ওপর জোর দিয়েছে। এমনকি নিজের স্বজনের বিরুদ্ধেও ন্যায়বিচার করতে বলা হয়েছে।
৮. ইবাদতের প্রভাব পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত—এসব ইবাদত শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এগুলোর মাধ্যমে মানুষের চরিত্র গঠিত হয়। যেমন:
- নামাজ মানুষকে অশ্লীলতা ও গোনাহ থেকে বিরত রাখে।
- রোজা ধৈর্য ও আত্মসংযম শেখায়।
- যাকাত দানশীলতা ও সহানুভূতির মানসিকতা গড়ে তোলে।
৯. আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মশুদ্ধি ইসলাম আত্মার পরিশুদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে: “যে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করলো, সে সফল হলো।” (সূরা আশ-শামস: ৯)
চরিত্র গঠনের জন্য নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা জরুরি—চোখ, কান, মুখ, হাত, পা—সবকিছু আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবহার করা একজন প্রকৃত মুসলমানের গুণ।
ইসলাম শুধু ইবাদতের ধর্ম নয়; এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। একজন মুসলমানের চলাফেরা, আচরণ, কথাবার্তা এমনকি মনোভাবও ইসলামের নির্দেশনার আলোকে হতে হবে। সৎ চরিত্রবান ব্যক্তি শুধু সমাজে নয়, পরকালেও সফল। তাই আজ থেকেই ইসলামি আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলি, যেন আমরা সমাজে একজন আলোকিত মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে পারি।